এবিএনএ : শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের জ্ঞান ও দক্ষতায় গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষাই পারে এ দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি গড়ে তুলতে। সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর কাজ করে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষাকে জাতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করে শেখ হাসিনার সরকার কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে দু’দিনব্যাপী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজসমূহের অধ্যক্ষগণের সম্মেলন ও ‘ইন্ডাস্ট্রি-ইনস্টিটিউশন লিংকেজ’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) অশোক কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট-এর প্রকল্প পরিচালক মো: ইমরান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো: মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেসন্স অফিসার ড. মো: মোখলেছুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ১০ কোটি ৫৬ লক্ষ মানুষ কর্মক্ষম। শতকরা হারে তা ৬৬%। ২০৩০ সালে তা ৭০% এ উন্নীত হবে। এ এক বিশাল সুযোগ। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
নতুন প্রজন্মকে আধুনিক কারিগরি প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে। এ দায়িত্ব আমাদের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, আজকের দিনে শুধু সার্টিফিকেট দেখিয়ে লাভ হচ্ছে না, দক্ষতাও দেখাতে হয়। কাজের মান দেখাতে হয়। তাই যারা বিশ্বমানের দক্ষতা অর্জন করছেন বা করবেন, তাদের জন্য সারা বিশ্বের দরজা উন্মুক্ত। পৃথিবীর যে কোনো দেশে তাদের ডাক পড়ছে বা পড়বে। বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এদের অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষিত, কিন্তু অদক্ষ বা আধা-দক্ষ। এরা দক্ষ হলে রেমিটেন্সের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারতো। ইতোমধ্যে সরকার কারিগরি শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে যেখানে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ১.২%, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.১১%।
২০২০ সালের মধ্যে এ হার ২০%এ উন্নীত করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ২৩টি আন্তর্জাতিক মানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে নতুন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন আরো এক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কারিগরি খাতে পূর্বে কোনো প্রকল্প ছিল না। এ সরকারের সময়েই কারিগরি খাতে ৫টি বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। আরো ১২টি পাস হয়েছে। এই প্রথম ৪২০ জন শিক্ষককে সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে, আরো ১,১৫০ জনকে পাঠানোর চুক্তি করা হয়েছে। নাহিদ আরো বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষায় মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশের ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে, বাকি ৩টিতে স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। একশত ভাগ মহিলা শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ২০% কোটা সংরক্ষিত আছে। নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আলাদা টয়লেট, কমনরুম ও হোস্টেল করা হচ্ছে। সরকার কারিগরি খাতে নতুন বিপ্লব এনে দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার লক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলনে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সরকারের দিক-নির্দেশনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি, মাঠ পর্যায়ের সমস্যা ইত্যাদির নানামুখী পর্যালোচনা করা হবে।